আমেরিকা , মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪ , ২৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
ডেট্রয়েটে রক্ষণশীল দলের কনভেনশনে মূল বক্তা ট্রাম্প ফোর্ট গ্রেটিওট টাউনশিপের হোম ডিপোতে বোমা হামলার হুমকি ডেট্রয়েটে বন্দুকধারীর গুলিতে নিহত ২, আহত ১  লাইসেন্স ছাড়া বন্দুক বহন, সাবেক ওয়ারেন সিটি কাউন্সিলম্যান অভিযুক্ত অপহরণ, যৌন নির্যাতনের অভিযোগে ফ্রেজার বাসিন্দা অভিযুক্ত ফার্মিংটন হিলসের বাসিন্দা প্রাক্তন এটিএফ তদন্তকারী মহামারী ঋণ প্রকল্পে অভিযুক্ত বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসে দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান ৫ হাজার ডলারের অনুদান ফেরত দিলেন মিশিগানের আইনপ্রণেতা মদের দোকানে ডাকাতির অভিযোগে মনরোর এক ব্যক্তি গ্রেপ্তার যুক্তরাষ্ট্রের ‘নেসা সেন্টার’ প্রতিনিধিদলের ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাস পরিদর্শন আগামী সপ্তাহে ডেট্রয়েট আসছেন কমলা হ্যারিস সাউথফিল্ডে ভবনে গাড়ি বিধ্বস্ত হয়ে চালকের মৃত্যু হবিগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৫ জনের পরিচয় মিলেছে ২০২৩ সালে মিশিগানে ইভি দ্রুত চার্জিং অবকাঠামো ৫২% বৃদ্ধি পেয়েছে মিল্টন সমাদ্দার গ্রেপ্তার : মুখোশের আড়ালে যত অভিযোগ ভুল পথে গাড়ি চালানোর জন্য উইক্সমের এক ব্যক্তি গ্রেপ্তার ইউনির্ভাসিটি অব মিশিগানের পার্কিং  কাঠামোতে যৌন নির্যাতন নর্থ ক্যারোলিনায় পরোয়ানা তামিল করতে গিয়ে ৪ পুলিশ কর্মকর্তাসহ নিহত ৫ আদালতের তারিখ এড়িয়ে পার্কে লুকিয়ে থাকা সন্দেহভাজন পুলিশের গুলিতে আহত লিভোনিয়ায় স্কুলে বন্দুক নিয়ে ছাত্র : ক্লাসরুমে তালাবদ্ধ শিক্ষার্থীরা

শতফুল বিকশিত হোক

  • আপলোড সময় : ২৯-০১-২০২৪ ১১:৫১:৪৪ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ২৯-০১-২০২৪ ১১:৫১:৪৪ পূর্বাহ্ন
শতফুল বিকশিত হোক
হবিগঞ্জ, ২৯ জানুয়ারি : সীমাবদ্ধতা আছে। তবে বিকশিত হওয়ার মত পারিপার্শ্বিকতাও আছে। তারপরও কেন যেন স্বপ্নগুলো বিকশিত হচ্ছে না। কে যেন আটকে রাখছে পিছনদিক থেকে। স্বপ্নবাজরা স্বপ্নদেখলেও হায়নারা কামড়ে ধরছে। আছে হতাশা আর প্রাপ্তির গল্প। দুঃখ বেদনার মেলবন্ধনে এগিয়ে যাচ্ছে হবিগঞ্জবাসীর চিকিৎসা সেবার সর্বোচ্চ ক্ষেত্র ২৫০ শয্যা হবিগঞ্জ আধুনিক জেলা সদর হাসপাতাল। ২/১জন প্রমিথিউস যখন সুখের উপলক্ষ এনে দেয়ার স্বপ্নে বিভোর তখন পিছন থেকে টেনে ধরার মধ্যেই চলছে আমাদের এই হাসপাতালের দিনকাল। প্রতিবাদী কণ্ঠস্বরগুলো অনেক শ্লোগান দিয়েছে। সাংবাদিকরা অনেক লিখনী লিখেছে। কিন্তু আমাদের হাসপাতাল নিয়ে যেন দুঃখের শেষ নেই।
দিন দিন হাওর অঞ্চলের একটি নাভী হিসাবে নিজেদের অবস্থান তৈরি করেছে হবিগঞ্জ শহর। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণা, কিশোরগঞ্জ, ব্রাক্ষণবাড়িয়া ও মৌলভীবাজার কিছু এলাকার লোকজন এখানে চলে আসেন যে কোন প্রয়োজনে। বিশেষ করে এই সকল এলাকার দরিদ্র লোকজনের চিকিৎসার ভরসারস্থল হবিগঞ্জ-২৫০ শয্যা আধুনিক জেলা সদর হাসপাতাল। কিন্তু হাসপাতালটি মায়ের বুকে নবজাতকের লাশ উপহার, বুকে ব্যাথা নিয়ে এসে কবরের গন্তব্যে পৌছানো আর রেফার নামক ব্যবস্থাপত্রের বাহিরে খুব বেশি দিতে না পারলেও বিকল্প না থাকায় আমরা বার বার ছুটে আসি এখানে। আর আমাদের এই আসাকে পূজি করে এখানে গড়ে উঠেছে অনেক প্রাইভেট ক্লিনিক, বড় বড় ঔষধের দোকান, এ্যাম্বুলেন্স স্ট্যান্ড আর দালাল নামক একটি পেশাজীবীর।
হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির সাথে সম্পৃক্ততা আর সাংবাদিকতার পেশার টানে আমার নিয়মিত যাতায়াত এই হাসপাতালে। সেখানে গেলেই চোখে পড়ে অনেক অসংগতি। সেগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করি। তুলে ধরার পর কিছুটা কাজও হয় মাঝে মাঝে। আবার লুকোচুরি খেলাও হয় অনেক। এর মাঝেই মাঝে মাঝে ভাল খবর আলোড়িত করে নিজেকে। খারাপ খবরে হতাশও হয় নিয়মিত।
করোনা মহামারীর সময়ে সিলেট বিভাগে সর্বোচ্চ নমুনা হবিগঞ্জ থেকে গেলেও এখানে ছিল না কোন ল্যাব। এ নিয়ে অনেক লেখালেখি করেছি। এক সময় ল্যাব ইনচার্জ ও লোকবল নিয়োগ করা হয়। কিন্তু ল্যাবই স্থাপন করা হয়নি। পরে যখন ল্যাব স্থাপন করা হল তখন দেশে করোনা নিয়ন্ত্রনে চলে আসে। এখন এই ল্যাব হাসপাতালের জন্য একটি বিষপোড়া হিসাবে দেখা দিয়েছে। হাসপাতালের অনেকগুলো রুমে আছে বড় বড় স্ট্যারিলাইজ মেশিনসহ ভারী যন্ত্রপাতি। বড় একটি জেনারেটরও আছে সেখানে। বড় বড় এই মেশিনগুলো কেন্দ্রীয়ভাবে টেন্ডারের মাধ্যমে সরবরাহ করা হলেও কোনদিন এখানে এই মেশিনগুলো চলেনি। আর চলারমত অবস্থাও নেই এগুলোর। বরং এই মেশিনে নষ্ট হচ্ছে হাসপাতালের অনেক জায়গা।
হাসপাতালে নবজাতকদের জন্য রয়েছে একটি স্ক্যানো। সেখানে বিশেষায়িত চিকিৎসার কথা থাকলেও ১১টি সিটের বিপরীতে শতাধিক নবজাতকও সেখানে ভর্তি থাকে। এমনকি স্ক্যানুর বাহিরের বারান্দাসহ ছাদ পর্যন্ত এর বিস্তৃতি। ফলে প্রতিমাসে সেখান থেকে ৩০টি লাশ ফেরত আসে মায়েদের কোলে। আর যারা সুস্থ হয়ে ফেরত যায় তাদের সামনেও থাকে অনিরাপদ ভবিষ্যৎ। স্ক্যানোর সত্যিকারের উদ্দেশ্য এখানে ব্যাহত হয়েছে। হাসপাতালে শিশুদের জন্য দুটি বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পদ থাকলেও ১ বছর যাবৎ পদদুটি শুন্য। এই স্ক্যানো ও শিশু ওয়ার্ডে রোগীর আধিক্য থেকে উপলদ্ধি করা যায় এই হাসপাতালে শিশুদের জন্য বিশেষায়িত চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেয়ার এখনই সময়।
হাসপাতালের পরীক্ষাগার ও যন্ত্রপাতি এবং পরীক্ষার সময় নিয়ে অতীতে অনেক লেখালেখি হয়েছে। এমনও শোনা গেছে প্রাইভেট ক্লিনিকগুলোর কারনে হাসপাতালের যন্ত্রপাতিগুলো কৌশলে নষ্ট করে রাখা হয়। কিন্তু এখন অবস্থার পরিবর্তন এসেছে। রাত ৯টা পর্যন্ত এক্সরে,ইসিজি হচ্ছে। প্রেসার ডায়াবেটিসের জন্য আলাদা কর্ণার করা হয়েছে। এর সুফল আসতে শুরু করেছে। কিন্তু তদারকি না করলে আবারও পুরনো অবস্থায় চলে যেতে পারে।
করোনার পর হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার যখন নিষ্ক্রিয় তখন সেখানে কয়েকজন স্বপ্নবাজ তরুণের মাধ্যমে সেটি ঘুরে দাড়াতে শুরু করে। আর এই স্বপ্নবাজ তরুণরা এই মাটিরই সন্তান। একজন হবিগঞ্জের মাঠের ক্রিকেটার হিসাবে প্রিয়মুখ এনেস্থেসিয়ার কনসালটেন্ট ডা. আশিক ও সার্জারী বিশেষজ্ঞ ডা. অনুজ। ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ ও শহীদ তাজউদ্দীন মেডিক্যাল কলেজে সফলতার সাথে কাজ করা ডা. অনুজ এই মাটির ঋণ পরিশোধ করতে নেমে যান মাঠে। তার সাথে আরেকজন সার্জন ডা. রাশেদও স্বক্রিয়ভাবে কাজ করতে থাকেন। তারা হাসপাতালের অপারেন থিয়েটারকে শুধুই সচল করলেন না, মাসে ৩০০টির মত অপারেশন করতে থাকলেন। আর এতেই শুরু হয়ে যায় ষড়যন্ত্র। এই অপারেশনগুলো বাহিরে না গেলে যে অনেক বড় বড় বিনিয়োগ ধাক্কা খাবে। ডা. অনুজরা অবশ্য ষড়যন্ত্রে মুছড়ে যানটি এটিই আশার কথা। হাসপাতালের লোকবল অর্গানোগ্রামে ২৭জন কনসালটেন্ট থাকার কথা থাকলেও ২২টিপদ শুন্য। শিশুর মত গাইনী বিশেষজ্ঞ ছাড়াই চলছে এই হাসপাতাল। অথচ এই হাসপাতালে মাসে কয়েকশ ডেলিভারী হয়। গাইনী বিশেষজ্ঞের পদায়ন হলে এখানে অনেক বেশি নরমাল ও সিজার ডেলিভারী হত। বিশেষ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী অনেক বেশি চিকিৎসা সেবা পেত। সেই পদ কেন শুন্য তা আমার বোঝে আসেনি। এখানে গাইনীর পদায়ন এবং অনেক বেশি ডেলিভারী হতে থাকলেও সমস্যা শুরু হবে অন্যত্র?
হাসপাতালের সুবিধা-অসুবিধা দেখভালের দায়িত্ব এর ব্যবস্থাপনা কমিটি। কিন্তু আমরা দেখেছি কমিটির দায়িত্বহীনতা। পতাকা লাগানো সভাপতির পরও এই হাসপাতাল আইসিইউ পাওয়ার তালিকর প্রথম লিস্টে ছিল না। হাসপাতালে মিটিং হয়েছে ডিসি অফিস আর সার্কিট হাইজে। সময়ে আর অসময়ে। আমার সাংবাদিক সহকর্মী রাসেল চৌধুরী প্রেসক্লাবের সভাপতি হিসাবে সেই মিটিংয়ে যাওয়ার অভিজ্ঞতা থেকে বলে ‘মনে হয়েছে আমাদের হাসপাতাল মাউন্ড এ্যালিজাবেথ এরম ত’। হাসপাতালের একজন আরএমও নিয়মিত দায়িত্ব পালন করেন না। সেটি দেখার কেউ নেই। পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট আর এমসির ভোগান্তি নিয়ে অনেক অভিযোগ রয়েছে। সেগুলোরও নেই কোন সমাধান। এই হাসপাতালের টিকেট বিক্রি, ক্যাবিন ও বেড ভাড়া এবং পরীক্ষার ফি থেকে সরকার বছরে কোটি টাকার উপর রাজস্ব পাচ্ছে। কিন্তু সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের হাসপাতাল কেন সবার পিছনে সেই প্রশ্ন আমার।
হতাশার মাঝে আছে কিছু আশার আলো। এই হাসপাতাল দুপুরের পর থেকে ৫০০ এর অধিক রোগীকে পাহারা দেয় একজন মাত্র ডাক্তার। আর জরুরী বিভাগসহ সকল ওয়ার্ডে মেডিক্যাল এ্যাসিসটেন্টদের চিকিৎসা নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই। কিন্তু এখন অবস্থার পরিবর্তন হবে। আর এই পরিবর্তনের সুযোগ এনে দিয়েছে শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজ। এই মেডিক্যালের প্রথম ব্যাচের ৩৩জন এমবিবিএস পাশ করেছে। তারা এখন এই হাসপাতালে ইন্টার্নি করবে। ফলে এই  হাসপাতালে এখন ২৪ ঘন্টা রোগীরা পাশে পাবে নূন্যতম এমবিবিএস পাশ করা ডাক্তারের।
আমাদের হাসপাতালে আছে লুকায়িত অনেক সম্ভাবনা। সেই সম্ভাবনাগুলো এখন দৃশ্যমান হতে চলেছে। ভাল ব্যবস্থাপনা কমিটি, যথাযথ তদারকি আর ভাল কাজে পাশে থাকা ও উৎসাহ দেয়ার মনোভাব দেখালে আমাদের হাসপাতালের সম্ভাবনাগুলো বিকশিত হবে। মিতা চ্যাটার্জীর ‘শতফুল বিকশিত হোক’ কবিতার শেষ দুই লাইন দিয়েই শেষ করছি এলোমেলো ভাবনাগুলো। “জানা অজানা কত শত ফুল সাজিয়ে ধরণীতল, সৃষ্টির মাঝে স্রষ্টা তোমার স্নেহের শতদল।
লেখক : সাংবাদিক ও আইনজীবী 
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Suprobhat Michigan

কমেন্ট বক্স
ধোঁয়াটেযুক্ত ওয়ারেন কনডোতে পাওয়া অচেতন ব্যক্তি হাসপাতালে মারা গেছেন

ধোঁয়াটেযুক্ত ওয়ারেন কনডোতে পাওয়া অচেতন ব্যক্তি হাসপাতালে মারা গেছেন